ওবাইদুল হক চৌধুরী,সৌদিআরব থেকে ফিরে::
কেও বলে জিনের পাহাড়, কেও বলে মদিনার জাদুর পাহাড় আর কেও বলে চুম্বকের পাহাড় ! যে নামেই পরিচিত হোকনা কেন এটি পৃথিবীর অবাক এক বিস্ময়। সৌদি আরবের মদিনা শহর থেকে প্রায় ৪৫ কিলোমিটার উত্তর-পশ্চিমে ওয়াদি আল বায়দা নামক স্থানে এই জিনের পাহাড়। এর অবাক বৈশিস্ট হলো সবকিছুকেই টেনে নিয়ে যায় মদিনার দিকে।
আমাদের নিজস্ব বলয়ে এমন কিছু স্থান রয়েছে, যা বারবার দেখার পরও তৃপ্তি মেটে না,শেষ হয়ে যায়না কৌতুহল। এই বিস্ময়ের পাহাড় সম্পর্কে আপনিযতই জানবেন ততই অবাক হবেন।
রহস্যময় এই পাহাড় নিয়ে রীতিমত হৈ চৈ চলছে পৃথিবীজুড়েই । জিনের সেই পাহাড়টি মদিনায়। কোন এক অদৃশ্য শক্তি সবকিছুকেই টানে ওই পাহাড়ের দিকেই! সৌদি আরবে ওয়াদি আল জিন (জিনের উপত্যকা) নামের এলাকায় এমন হয়, লোকে বলে এটা জিনের কারসাজি।
প্রতিদিনই সারা পৃথিবী থেকে হাজারো পর্যটক ছুটে আসেন রহস্যময় এই শক্তির ক্ষমতা দেখতে ও উপলব্ধি করতে।
সৌদি আরবের মদিনা শহর হতে প্রায় ৪৫ কিলোমিটার উত্তর-পশ্চিমে ওয়াদি আল বায়দা নামক স্থানে এই জিনের পাহাড় অবস্থিত। সেই পাহাড়ের
বিস্ময়কর ঘটনা হচ্ছে, সবকিছুই ঢালুর বিপরীত অর্থাৎ উচুর দিকে গড়ায়। সাধারণ নিয়মেরর একাবারেই উল্টো। রহস্যঘেরা এই পাহাড়ে বন্ধ গাড়িও ঢালুর বিপরীতে চলতে শুরু করে। তাও আবার ছোট খাটো বস্তু হলেও কথা ছিলো এই অদৃশ্য শক্তি টেনে নিয়ে যায় কয়েক টন ওজনের গাড়িকেও প্রায় ১৪০ কিঃ মিঃ স্পীডে !
অনেকেই ধারণা করেন, জায়গাটিতে প্রচুর চুম্বকজাতীয় পদার্থ রয়েছে বিধায় এমন ঘটনা ঘটে।
নানা তথ্যসুত্র বলছে, ২০১০ সালের দিকে সৌদি সরকার ওয়াদি আল বায়দায় একটি সড়ক তৈরির পরিকল্পনা করেছিল। কিন্তু তাতে ঘটে বিপত্তি। ৩০ কিলোমিটার পর্যন্ত কাজ করার পর হিতে বিপরীত। হঠাৎ দেখা যায়, রাস্তা নির্মাণের যন্ত্রপাতি ধীরে ধীরে মদিনা শহরের দিকে একা একাই চলে যাচ্ছে।
দেখে মনে হয়, যেন অদৃশ্য কোনো শক্তি যন্ত্রপাতিগুলোকে মদিনার দিকে ঠেলে দিচ্ছে। আশ্চর্যের বিষয়, পিচ ঢালাইয়ের ভারী রোলারগুলোও বন্ধ থাকা অবস্থায় ধীরে ধীরে ঢালু বেয়ে উপরের দিকে উঠতে থাকে।
এমন দৃশ্য দেখে শ্রমিকরা ভীতসন্ত্রস্ত হয়ে পড়ে। পরে তারা সেখানে কাজ করতে অনীহা প্রকাশ করে। সড়কটির কাজ যেখানে বন্ধ করা হয় সেখানে চারিদিকে বিশাল বিশাল কালো পাহাড়।
ওখানের শেষ মাথায় গোলচত্বরের মতো হয়ে আবার সেই রাস্তা দিয়েই মদিনা শহরে আসার ব্যবস্থা করা হয়েছে। ওই সড়কটি ২০০ কিলোমিটার করার কথা থাকলেও শেষ পর্যন্ত ৪০কিলোমিটার করেই কাজ বন্ধ করে দেয়া হয়।
এমন অদ্ভুত রহস্যময় ঘটনায় জিনের পাহাড়কে ঘিরে নানা কৌতুহলের সৃষ্টি হয়। বিশ্বের বিভিন্ন দেশ থেকে অসংখ্য পর্যটক এই জিনের পাহাড় দেখতে আসে। প্রতিবছর হজে আসা মানুষও এই রহস্যঘেরা জিনের পাহাড় দেখার জন্য ভিড় করে। তবে দুনিয়াজোড়া জ্ঞান বিজ্ঞানের এত প্রসারের পরেও আজ অবধি এই অপার রহস্যের কিনারা করতে পারেনি কেওই। আজও বিস্ময় সৃষ্টি করে চলেছে এই অদৃশ্য শক্তির পাহাড় ।
পাঠকের মতামত